কৃষির শিক্ষাথী হিসেবে ক্যাডার চয়েসে আমার একান্ত অভিমত !!
(ক্ষুদ্র জ্ঞানে আমার অভিমত, ম্যান টু ম্যান এটি ভিন্ন হবে)

সবাইকে শুভেচ্ছা। ইতিমধ্যেই ৩৮তম বিসিএস এর আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। অনেকে আবেদন করেছেন, অনেকে অপেক্ষায় আছেন। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্লাটফর্ম বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস। আর তাই লক্ষ পরীক্ষার্থীর বাসনা বিসিএস ক্যাডার হওয়া। আর এর প্রথম ধাপ বিসিএস-এ আবেদন ও ক্যাডার চয়েস। এই বিষয়টি নিয়ে আমরা অনেকে ঝামেলাই পড়ি। একজন বিসিএস কর্মকর্তা হিসেবে এমন অভিজ্ঞতা আমারও হয়েছিল। এটা ঠিক যে বিসিএস এর মাধ্যমে আমরা আমাদের স্বপ্ন পূরণ করতে চাই (যারা ক্যাডার হতে চাই), এর অনেকগুলো ক্ষেত্র রয়েছে যেখানে আমরা যেতে পারি, তবে একজন কৃষির ছাত্র হিসেবে আমাদের কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে (অন্যদের ক্ষেত্রেও তাই, যে যে বিষয়ে পড়েছি)। বিসিএস বিষয়ে আমি তেমন অভিজ্ঞ নয়, জ্ঞান খুব সামান্য। তবে এই ধাপ পাড়ি দিয়ে আসার পথে ক্যাডার চয়েস সম্পর্কে আমার ধারণা ও অভিমত শেয়ার করার চেষ্টা করছি।
কৃষিতে স্নাতকদের ক্যাডার চয়েসে যে বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে-
১) আমরা কৃষিতে স্নাতক করেছি, তাই কৃষি বিষয়ে আমরা স্পেশালিস্ট
২) বিসিএস (কৃষি) ক্যাডারে এখন পোস্ট সংখ্যা আগের তুলনায় অনেক বেশি
৩) সরকার কৃষিতে অনেক বেশি জোড় দিয়েছে, ফলে কৃষি ক্যাডারদের অবস্থান আরো বেশি সমুন্নত হয়েছে, তাই কৃষি ক্যাডাররা এখন অনেক বেশি কাজের সাথে জড়িত এবং যে কোন সময়ের তুলনায় কৃষি ক্যাডাররা অনেক বেশি সম্মানিত ও প্রশংসিত ও সুযোগ সুবিধা লাভ করেন।
৪) ভাইবাতে এটা কমন যে আপনি কৃষিতে পড়েছেন তাই বোর্ড মেম্বররা বলবেন- কৃষি ক্যাডার আপনার জন্য বেস্ট (অধিকাংশ ভাইবা বোর্ডে এমন দেখা যায়)।আপনি না গেলে কৃষিতে কে সার্ভিস দেবে।আপনি সেরাটা দিতে পারবেন। এটা সত্য যে কৃষিতে আমরা বেস্ট সার্ভিস দিতে পারব।
৫) আমাদের প্রত্যাশা অনেক কিছু তবে বাস্তবতার সাথে তাল মিলিয়ে এমনভাবে ক্যাডার চয়েস দিতে হবে যেন আমার স্বপ্ন পূরণে কোন জটিলতা সৃষ্টি না হয়।
অনেকে ক্যাডার চয়েস কিভাবে দিব তার ক্রম জানতে চান। আমি এর উত্তরে বলি- এই বিষয়টি আপনার নিজের উপর নির্ভর করছে। কারণ কেউ প্রশাসন ক্যাডারকে প্রথম চয়েস ভাবেন, কেউ পররাষ্ট্র, কেউবা পুলিশ, কেউ অডিট, কেউ কৃষি। আসলে নিজের যোগ্যতা ও স্বপ্ন অনুযায়ী আপনি কোন পথে যাবেন সেটা আপনি জানেন। আর আপনি চাইলেই স্বপ্ন দেখতে পারেন,পরিশ্রম করতে পারেন। কারণ আপনার যোগ্যতা রয়েছে। আর কৃষিতে পড়াশোনা করা সবাই অনেক বেশি যোগ্য,মেধাবী,সৃজনশীল। অন্তত সার্ভিসে এসে আমি দেখছি। কারণ নিজেকে সৃজনশীল করার সব সুযোগ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে (বিশেষ করে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে)। কারণ সৃজনশীল যত কাজ আপনারা করেন তা চাকুরীর পরীক্ষার প্রাথমিক চর্চা হয়ে যায়, যা আপনি নিজেও বুঝতে পারছেন না।
আসল কথা হল আপনি কোন ক্যাডার হতে চান তা নিজে ঠিক করুন। নিজেতে প্রশ্ন করুন নিজের ভালোলাগা জানুন। অন্তত কোন ক্যাডারের কি কাজ তা শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সবাই জানে তা আমি মানি। এখানে ক্ষমতা বেশি, এখানে এই হবে ,সেই হবে, কে কি বলল এসব ভাববেন না। জীবনটা আপনার, স্বপ্ন দেখবেন আপনি, আপনার মত করে।কোথায় গেলে আপনি নিজের সর্বোচ্চটা দিতে পারবেন তা আপনি জানেন। তবে বিসিএস ক্যাডার চয়েসের ক্ষেত্রে-
১) পররাষ্ট্র ক্যাডার প্রথম চয়েস না দিলে দিবেন না। প্রথমে না দিয়ে পরে দিলে এটা ভাইবাতে আপনার জন্য পুরো নেগেটিভ হবে।
২) আপনার বিষয় অর্থাৎ কৃষি ক্যাডারকে কখনো চয়েসের নিচ দিকে রাখবেন না। এটা প্রমাণ করে আপনার বিষয়ের প্রতি আপনার আগ্রহ নেই যা আপনার দৃষ্টিভঙ্গি নেগেটিভ প্রমাণ করে। বিগত ভাইবাতে অনেক ভাই-বোনদের ফেল করানো হয়েছে শুধু একটা কারণে। আমি মনে করি যারা বোথ ক্যাডারে পরীক্ষা দিবেন তাদের জন্য সেফ জোন হল কৃষি ক্যাডারকে ৩-৫ এর মধ্যে রাখা। এতে আপনি- “কেন কৃষিতে পড়ে অন্য ক্যাডারে যেতে চান? বা কৃষিতে পড়েও কেন কৃষিকে কেন অত নম্বরে রেখেছেন? আপনি কি কৃষিতে আগ্রহী নন?” এই ধরণের প্রশ্নগুলোর উত্তর কৌশলে দিতে পারবেন।এই অবস্থানে রাখলে আমি মনে করি আপনি কৃষিকে নিচে রাখার কারণ হিসেবে ফেল করবেন না।
৩) অন্যান্য জেনারেল ক্যাডার যেগুলো আপনি দিতে চান আপনার মত করে ভেবে চয়েস করবেন, সেভাবে ক্রম দিবেন। তবে কৃষির উপরে থাকার মত অধিকাংশ তালিকায় দেখা যায়-পররাষ্ট্র, প্রশাসন,পুলিশ,অডিট,ইকোনোমিক ইত্যাদি।
৪) মনে রাখবেন ভাইবাতে প্রথম দুই-তিনটি ক্যাডার (আপনার চয়েষ লিস্ট) ও আপনার বিষয় (চয়েসে দেন আর না দেন) থেকে বেশি প্রশ্ন করা হয়। তাই এ বিষয়টি ভেবে চয়েস দিবেন।
আশা করি এবার আপনি আপনার মত খুব সহজে ক্যাডার চয়েস দিবেন। নিজের মনকে প্রশ্ন করে সঠিকভাবে এগিয়ে যান আপনার স্বপ্নের পথে। বিসিএস বাংলাদেশের লোভনীয় চাকুরী, তবে একমাত্র নয়। এমন না যে এটা না হলে আপনি ধ্বংস হয়ে যাবেন। মনে রাখবেন পড়াশোনা শেষ করেছেন, এবার সময় কিছু করার, বাবা মা কে দেখাশোনা করার, এজন্য আপনি আপনাকে শান দিবেন। প্রথম সারির (যেগুলো আপনার স্বপ্ন দেখেনে) চাকুরীর জন্য চেষ্টা করুন। সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা রাখুন। তিনি রিযিকের মালিক, আপনি শুধু চেষ্টা করুন। আর বাবা-মাকে সবসময় দোয়া করতে বলবেন। সবার জন্য রইল শুভ কামনা।
উৎসর্গ: শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান,সাবেক শিক্ষার্থী, প্রশাসন , শ্রদ্ধেয় শিক্ষক মন্ডলী ও কর্মকর্তা কর্মচারীদের !! শেকৃবি, তুমি আমায় করেছ লালন, তোমার যতনে তোমার কোলেতে দেখেছি আমি বিশ্ব জয়র স্বপন !!
লেখক: মো: রফিকুল ইসলাম, ৩৫ তম বিসিএস (কৃষি) ক্যাডার